কৃষি শ্রমিক-খরিদদারের অপেক্ষায় মধুখালী হাটে

নিজস্ব প্রতিবেদক 
ফরিদপুরের মধুখালীতে গড়ে উঠেছে কৃষি শ্রম বিক্রির বিশাল হাট। কৃষি শ্রমিক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র মানুষ এখানে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। বিশেষ করে মধুখালী বাজারের শুক্র ও সোমবার হাটের দিন। বেলা বারতেই মধুখালী বাজার বাসষ্ট্যান্ড ওয়ালটন শো-রুমের সামনে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। সকাল থেকেই মানুষগুলো জড়ো হতে শুরু করে। আরেক শ্রেণির মানুষ এখানে আসে শ্রম কিনতে যারা কৃষি খামার করেন। প্রায় ১০/১২ বছর ধরে মধুখালীতে এই কৃষি শ্রমিকের হাট গড়ে উঠেছে আপন গতীতে। এসব শ্রমিকরা পাট কাটা, ধোয়া থেকে শুরু করে খেত-খামার এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবারের দুই হাটে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন থেকে

গ্রামের গেরস্থগণ শ্রম বা কৃৃষি শ্রমিক কিনতে আসেন। হাটে ওঠা পণ্যের মত এখানেও চলে দরদাম। এসব শ্রমিকের শ্রমের মূল্য ৩৫০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত সাথে ৩ বেলা খাবার। সকাল হলেই চলতে থাকে দরদাম, দাম ওঠানামা করে যাকে বলা হয় বদলি। কেউ বলে কামলা। আবার অনেকে বলেন কৃষি শ্রমিক। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবারের হাটে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এই বদলির বাজার। সরেজমিনে দেখা গেছে, মূলত ফরিদপুর, যশোর,

সাতক্ষীরা, শেরপুর, পাবনা, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজবাড়ি সহ বিশেষ করে উত্তর বঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন এখানে আসেন কাজের সন্ধ্যানে। এক বেলার জন্য বা কয়েকদিনের জন্য তারা বিক্রি হয় এই বাজারে। ২৯ আগস্ট সোমবার শ্রমিকের হাটে কথা হয় চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মামা ও ভাগিনা মোঃ মুসা এবং ইসরাফিলের সাথে তারা জানান, তাদের নিজ জেলায় এ মৌসুমে তেমন কাজ নেই। পারিবারিক সমস্যায় পরে পরিবারে সদস্যের নিয়ে এখানে এসেছেন। ভাড়া বাড়িতে থেকেন এ মৌসুমে কাজ করে কিছু টাকা গুছিয়ে নিজ বাড়ীতে ফিরে যাবো। এ অঞ্চলে শ্রমের দাম বেশী, কাজও বেশী। তাছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে চলে আসি।শেরপুরের কামরুজ্জামান (৪২) জানান, মহাজনেরা আমাদেরকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। কাজের একটুও বিশ্রাম দিতে চায় না।সাতক্ষীরা থেকে আসা খোকন বলেন ৫/৭ বছর এলাকাতে কাজে আসি।

এবার ৩৩ দিন হয়েছে এসেছি। রাতে রেলস্টেশনে ঘুমাই দিনে কাজের সন্ধ্যানে যাই। কাজের মৌসুম শেষ করে আবার এলাকাতে চলে যাবো। বাজার বাসস্টান্ডের ওয়ালটন এক্সক্লুসিভ শো-রুমের সত্ত্বাধিকারী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আমার শো-রুম চালু করারও পূর্বে বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসে কৃষি শ্রমিকের হাট মিলে।সামনের স্থানটা পাকা করে দেওয়ায় তারা এখানে সুন্দর ভাবে শ্রমবিক্রি করতে পারেন। বিশিষ্ঠ শ্রমিক নেতা ফরিদপুর চিনিকল শ্রমজীবি ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক কাজল বসু বলেন কৃষি শ্রমিকগণ শ্রম বিক্রি করতে আসেন। কৃষি শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। রাতের বেলায় যাত্রী ছাউনি,বিভিন্ন মার্কেটের বারান্দায় এবং রেল স্টেশনে রাত্রি যাপন করেন। আবার কেউ খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটান। কাজ না পেলে কেউ খবর নেই না,খেয়ে না খেয়ে দিন/রাত কাটে। কাজ এবং খাদ্য সংকটে ভোগেন তারা।